জকিগঞ্জ টুডে ডেস্ক:: পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সঙ্গে বাংলাদেশের বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের কানেকশনের চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আইএসআইর এক কর্মকর্তার সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি কথোপকথনের সূত্র ধরে চালানো তদন্তে এসব তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
তদন্তে উঠে এসেছে, আইএসআই শীর্ষকর্তা জাভেদ মেহেদিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করছেন। তার যোগাযোগ তারেক রহমান ও খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে এজেন্ট শহীদ মেহমুদ লিংকে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন আমিরাত বিএনপির নেতা জাকির হোসেন।
জুলাই থেকে সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেহমুদ ও জাকিরের মধ্যে হওয়া ১১ বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের আইএস কানেকশনের তথ্যও উঠে এসেছে বিস্তারিতভাবে।
জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ফাঁস হওয়া কথোপকথনের সেই মেহমুদের পুরো নাম শহীদ মেহমুদ মুহাম্মদ শরিফ। তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করা আইএসআই এজেন্ট। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫৪তম লং কোর্সে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। পরে তিনি আইএসআইয়ে পোস্টেড হন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আইএসআইতেই নিয়োজিত ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পরও আইএসআইর এজেন্ট হিসেবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে দুবাইয়ে তিনি আল মারজান আল কাবের জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছেন। আইএসআইর কাছ থেকে তিনি মাসে তিন হাজার ডলার বেতন পান। সম্প্রতি বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির স্বীকৃতি হিসেবে তার বেতন বেড়ে মাসে চার হাজার ডলার করা হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আইএসআইর শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। শহীদ মেহমুদ আইএসআইর নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তিনি মূলত জাভেদ মেহেদির সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেন। শহীদ মেহমুদ তার যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুবাইয়ে বিএনপির সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সভাপতি জাকির হোসেনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। এই জাকির হোসেনের মাধ্যমেই মেহমুদ লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটের জকিগঞ্জে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে অনার্স করেছেন। দুবাইয়ের রয়েল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজে চাকরিরত জাকির হোসেন আসন্ন নির্বাচনে জকিগঞ্জ থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীও ছিলেন।
তদন্তে পাওয়া তথ্যানুসারে, আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ ও আমিরাত বিএনপির জাকির হোসেনের যোগাযোগ নিয়মিত এবং প্রায় নিরবচ্ছিন্ন। এ বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ বার জাকির হোসেনের সঙ্গে শহীদ মেহমুদের সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে এ মাসের ৭ তারিখ। জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের একাধিক কথোপকথন থেকে জানা যায়, ৪ জুলাই সৌদি আরবে তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআইর নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদির একটি বৈঠক হয়েছে। শহীদ মেহমুদের সঙ্গে কথোপকথনে তারেক রহমানকে জাকির ‘বস’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
জানা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে দেশে নানামুখী তৎপরতা চালানোর জন্য আইএসআই সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আইএসআইর পক্ষ থেকে তৈরি করা তালিকা বিএনপির কাছে দেওয়া হয়েছে। এ তালিকা তারেক রহমানের কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা হয়েছে এসব বৈঠকে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে আইএসআইর বেতনভুক এজেন্ট শহীদ মেহমুদের অডিও কথোপকথন অনুসারে, বিএনপির এই নেতা বাংলাদেশে তাদের দলের কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি সহায়তা চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখন ভীষণ সমস্যার মধ্যে আছি। এ বিপদ থেকে আপনারাই উদ্ধার করতে পারেন।’ কথোপকথনে খন্দকার মোশাররফ আগামী নির্বাচনে চীনকে ম্যানেজ করার জন্য শহীদ মেহমুদকে অনুরোধও করছেন। প্রত্যুত্তরে শহীদ মেহমুদ আইএসআইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং এ ব্যাপারে কাজ করার আশ্বাস দেন। খন্দকার মোশাররফ ঢাকায় আইএসআইর কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্টের সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর জবাবে মেহমুদ জানান, তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এজেন্ট বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।
সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
Leave a Reply